আজ হোলি। দোল পূর্ণিমা। নানা রঙের নানা খেলা – আবীর, পিচকারি, জল-বেলুন থেকে আরম্ভ করে মিনা রঙ, ভাঙ এবং কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া। সব কিছু মিলিয়ে হোলি, বা ছোটোবেলায় যেমন জানতাম – রঙ খেলা।
আমাদের বাড়িতে রঙ খেলার রমরমা ভাব খুব একটা ছিল না। তবে এটা ঠিক যে অন্যান্য দিনের চাইতে এই দিনটা ছিল অনেক আলাদা। ছোটোবেলায় সব বাচ্চাদের মতই আমারও রঙের ভয় ছিল। আমি রঙ খেলতে চাইতাম না। বন্ধুরা সবাই যখন ডাকতে আসতো, তখন আমি মায়ের আঁচলের তলায় অথবা আমার ঘরে, দড়জা লাগিয়ে বসে থাকতাম। তবে মা পাঠিয়ে দিতেন বাইরে – সবার সাথে। কখনো কান্নাকাটি করতাম – যেতাম না। আর দিন গড়িয়ে গেলে খুব কষ্ট হতো। আবার কখনো বেরোতাম – বন্ধুদের সাথে – সারা পাড়াময় ঘুরতাম আর যাকে পারি রঙ দিতাম। খুব ছোটবেলার কথা। একটু বড় হবার পর আর বের হতাম না। বাড়িতেই খেলতাম – মা, মাসি, মামি, কাকিদের সাথে ও ছোট ভাই বোনদের সাথে... ব্যাস। বন্ধুরাও ব্যাস্ত হয়ে গেল এবং রঙ খেলার নিজেদের নিয়ম কানুন করে নিল। অনেক লোক আসতো বাড়িতে তখন – কেউ বাবা মায়ের পায়ে রঙ দিতে অথবা নিজেদের পায়ে রঙ নিতে। অদ্ভুত ব্যাপার ছিল। আমি ছিলাম পাশাপাশি, তবে না থাকার মতো করে। তখন মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো রঙ খেলার। মৈত্রীর সাথে। মনে হতো ও যেন সবসময়ই পাশে থাকে। মনে হতো একটু আবীর ওর নাকে, গালে, হাতে ছুঁইয়ে দিই। মনে হতো ওকে মিনা রঙের বালতি ভর্তি জল দিয়ে ভিজিয়ে দিই। একটা পিচকারি ভর্তি রঙ ওর গায়ে ছড়িয়ে দিই। কিন্তু সেই আশা আর পূর্ণ হতো না। ওর সাথে কাখনই রঙ খেলতে পারি নি। আমরা কাখনই এমন দিনে একসাথে ছিলাম না। একে অপরের ছবির মধ্যে রঙ লাগাতাম, আর চোখের জল ফেলতাম। এখন সাথে থাকি – এখন আর ওই ভাবে রঙ খেলা হয় না।
যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেলাম, তখনোও রঙ খেলা হতো, তবে আমি খুব একটা যেতাম না। একবার ভাঙ্গের লাড্ডু খেয়ে কয়েক ঘন্টা এক জায়গায় বসে ছিলাম – পরে জেনেছিলাম যে আমি নাকি কোথাও যাইনি বা কারো সাথে কথাই বলিনি ওই সময়টাতে। তারপর যখন বাঙ্গালোরের কলেজে ভর্তি হলাম, সেবারের হোলি ছিল মহান! হে হে হে। সত্যি মহান। আমরা সব্বাই মিলে সারাদিন রঙ খেল্লাম। ভাঙ খেলাম। হই চই করলাম। একটা জলের ট্যাঙ্কে রঙ ভর্তি করে সব্বাই মিলে ডুবোলাম। তারপর ছাদে গিয়ে জলের কলের তলায় বসে একজন আরেক জনের শরীর ঘষে ঘষে রঙ উঠালাম। খুব মজা হয়েছিল। তখনই প্রথম জানলাম যে হোলিকার সেই ঘটনার উপর ভিত্তি করে এখনও হোলিকার ঘর জ্বালানো হয়। ভালই ছিল বিকেলের এই অনুষ্ঠান।

এবার আর রঙ খেলার বিশেষ অবস্থা ছিল না। ওর অফিশ, আমারও অফিশ। খেলবো কোথায়? হয়তো গতবারের মত আজকে বাড়ি ফিরে দুজনে মিলে একটু খেলবো। তবে আজকে অফিশে এসেই যা হলো! হঠাৎ করে কোনো কথা নেই বার্তা নেই কিছু ভুত-প্রায় সহকর্মি এসে জুটলো আর রঙ্গে রঙ্গে ভরে গেল সবাই। তার পরই আমার এই অবস্থা। যাক, ভালই হলো। তবে মৈত্রী থাকলে আরো ভাল লাগতো। আরো একদিন তো আছে – দেখা যাক কি করতে পারি।
সবশেষে সব্বাইকে জানাই দোল পূর্ণীমার অশেষ শুভেচ্ছা, আন্তরিক প্রীতি ও ভালবাসা। সবার জীবন হয়ে উঠুক আনন্দময়, রঙ্গিন এবং শুখময়। সবার হোলি শুভ হোক।