বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০০৯

আজ বুকে শুধুই আগুন



আজ বুকে শুধুই আগুন
ভেতর জ্বলে দাউ দাউ করিয়া
যত তাপ সহ্য করিলাম আমি
ভুলে যাই তাহা কি করিয়া?

প্রেমের বাঁধনে বাঁধা মন
আকাশের কাছে যাচে
কি পাপ লুকাইয়া ছিল
মেঘের আনাচে কানাচে?

স্বপ্ন ভাঙে শেষ রাতে
চূর্ণ বিচূর্ণ হয় হিয়া
শ্রাবণ ঘনায় দুচোখে
রাত পার হয় জাগিয়া।

কি ভুল হইয়াছিল বল
কিবা তার এত বড় সাজা
ভীখারি হইয়াছি এবে
একদা ছিলাম রাজা।

আজ মন ভাবে একা বসি
কি পাইয়াছে সব হারাইয়া,
কাঁদে প্রান অহর্নীশি
কাঁদে বোকা কার লাগিয়া?

।। ছবি নেওয়া হয়েছে এখান থেকে ।।

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৯

আমি একলা ঘরে অতসী।

আমি একলা ঘরে
নীল বারমুডা পরে
কি হলো তার পরে – জানি না!

তুমি এসেছিলে
কিছু কি বলছিলে?
কিছু নিলে না দিলে – জানি না!

মাল খেয়ে আমি আউট,
তাই মনে এই ডাউট
যে এসেছিল, সে কি তুমি ছিলে?
নাকি আকাশপরি
কোনো অশরীরি
দেখতে পাইনি তাকে, দুচোখ মেলে।

ঘুম ভেঙ্গে আই সও,
তুমি বসে আছো
উদাসিন তাকিয়ে আকাশপানে,
দুচোখেতে স্বপন
নিজেতেই মগন
রুমটা ভরা তোমার গানে গানে।

আমি উঠে বসি
ডাকি, “হাই, অতসী।”
তুমি চমকে উঠে – পালালে!

মনে পরে গেল সেই
তুমি তো আর নেই
তবে কেন আমায় – জাগালে?

ছেড়ে গেলে তুমি যেই
আর কিছুই তো নেই
এই প্রাণটাই আছে যা বাকি,
তুমি যাবার পরে
আমি একলা ঘরে
এমনিতেই একাকি পরে থাকি।

শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০০৯

তোর জন্যে



ভেবেছিলাম,
হৃদয়ের জানলা খুলে দেব তোর জন্যে
ভুবন গানে ভরিয়ে দেব তোর জন্যে

কিন্তু তুই এলি না
আমায় মন দিলি না
সাড়া দিলি না আমার ডাকে,
এ মনে শুধু তুই
আছিলিস নিশ্চই
তোরই ছবি তাই মনে থাকে।

ভেবেছিলাম,
আকাশের তারা এনে দেব তোর জন্যে
সাগরের বুক চীড়ে মুক্তো নেব তোর জন্যে

কিন্তু তুই এলি না
তুই কি তুই ছিলি না
ভালবাসলি না কেন আমাকে?
আমি সব দিয়েছি
শুধু এই চেয়েছি
তোরই ছবি যেন মনে থাকে।

ভেবেছিলাম,
অপূর্ব পৃথিবী গড়ে তুলবো তোর জন্যে
তোর চোখে তারা হয়ে জ্বলবো – তার জন্যে
তোর কথাই শুধু, ভেবেছিলাম!

শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০০৯

কিবা দেশে আইলাম রেবা



কিবা দেশে আইলাম রেবা
কিবা দেশের গুন
আমারে ছাড়িয়া বন্ধু যায় দেরাদুন।

বন্ধুর তরে পরাণ করে
আমার আঁইঢাঁই,
বন্ধু বিনে এ জগতে আপন কেহ নাই।
কিবা দেশে আইলাম রেবা
কিবা দেশের গুন
পান্তা ভাতে ঘী ঢালে, মিষ্টি দইয়ে নুন।

হাজার পথ পার করিলাম
আমি বন্ধুর লাগি,
বন্ধু বিনে পরাণ আমার হইলো বিবাগি।
কিবা দেশে আইলাম রেবা
কিবা দেশের গুন
বন্ধু আমায় দিয়া গেল কপালে আগুন।।



কিবা দেশে আইলাম রেবা, কিবা দেশের গুন
একই গাছে পান শুপারি, একই গাছে চুন।

মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০০৯

আমার ছেলেবেলার বন্ধু



আমার ছেলেবেলার সেই বন্ধু
মনে পরে কি পরে না আজ
হারিয়েছে মনের গভিরে

তার সাথে ছিল খেলা
ছিল অনায়াসে ভালবেসে ফেলা
ছিল সমুদ্র মন্থনের চিন্তা

ছিল আকাশ পারে অনেক দূরে
ছোট্ট ঘর বানানোর ইচ্ছে
তার সাথে ছিল রাজ্য জয়

আমার ছেলেবেলার সেই বন্ধু
মনে পরে কি পরে না আজ
খুঁজে তো দেখিনি কোনদিন

আজ বৃষ্টি সারাদিন, রিমঝিম
আমরা কাগজের নৌকো বানাতাম
সেই নৌকো চড়ে যেতাম চাঁদের সিমানায়

তার নাম? সুমন্ত মনে হয়
তার চেহারা? মনে পরে না
তার ছবি? নেই; কখনো ছিল না

আমার ছেলেবেলার সেই বন্ধু
মনে পরে কি পরে না
আজ, আর সে বন্ধু নয়!

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০০৯

শুভ জন্মদিন।


আজ, বড় একা মনে হছে নিজেকে
জানি, তুমি আছো,
তবু, একা মনে হছে নিজেকে...


দিনে দিনে বছর গেল,
এলো আরেক দিন,
আঠাশ বছর বারে বারে
এলো সাতাশে আশ্বিন।

হল না জানা, হল না শেখা
কেউ রাখলো না মনে আমাকে,
শুয়ে শুয়ে, বেড়ে উঠলাম
বোঝা শেষ হল না নিজেকে।

সবার মাঝে থেকেও একা
এমনি করেই যায় দিন,
কিছু মনে রাখা, কিছু ভুলে যাওয়া
কত শত ঘটনা রঙীন।

দেশ ছেড়ে, বিদেশ, বিভুঁই
যেদিকে নিয়ে গেছে মন,
চলতে চলতে, একদিন তো থামবে
কান্না মেশা এ' জীবন।

পথের শেষে, ঘামে ভিজে
তোমার কাছে আসা,
আঁধার ঘরে, জ্বালে প্রদীপ
তোমার ভালবাসা।

তুমি আছো, তোমার স্বপ্ন আছে,
তবু কেন মন উদাসিন?
সবার আড়ালে, সবার অজান্তে
আজ আমার শুভ জন্মদিন।

বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

যদি আমিই না থাকি

যদি আমিই না থাকি,
কারে লয়ে করবে তুমি খেলা?
আমায় বুকে রাখো - আমায় করোনা হেলা

একই নদির পাড়ে মোরা
তবু দুরত্ব গভীর,
তোমার সোনার তরি, আমার বাঁশের ভেলা

একা পথের পথিক আমি
নীর্বিকার, নির্ভীক,
আমার বিজন বাস, তোমার থাকুক মেলা

চিরদিনের সাথি মোরা
আঁধার রাতের বাতি,
আমায় হাতে করেই তোমার কাটুক সন্ধেবেলা

বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০০৯

তোমার কথাই ভাবি


তোমার কথাই ভাবি
যখন তুমি থাকো না সাথে...

তোমার চোখের কাজল
আমায় কাছে ডাকে,
তোমারই মুখ চোখে
যেন দিবানীশি থাকে।

যেন এমন দিন আসে
তোমায়, আমি শুধু দেখে যাই...

তোমার সাথেই আমার
বহু যুগের ভালবাসা,
ভাঙা গড়ার খেলা
আর আশা নিরাশা।

তারই মাঝে মোরা
যেন থাকি দুজনার...

তোমার চুলের পাশে
জড়িয়ে আমার দৃষ্টি,
ওরা যেন কালো মেঘ
তব রূপ যেন বৃষ্টি।

চুপচাপ, একা একা
আমি শুধু ভিজে যাই...

তোমার ছোঁয়ার আশে
আমি ঘুরে ঘুরে আসি,
শুধু তোমারে মন চায়
আমি তোমায় ভালবাসি।

পারি না বলতে
ঘুরে ঘুরে যাই ফিরে...

শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০০৯

দেখা নেই তোর

রাত ভোর হয়ে এলো
দেখা নেই তোর
সারা রাত বসে মন
ভাবনায় বিভোর...

কখনো তো ভাব তুমি
আমার কথা,
কখনো তো জাগে প্রাণে
বিরহ ব্যথা,
তুমি নেই, কিছু নেই
শুধু, আছে আঁখিলোর...

তুমিহীনা আমি আজ
কেবল একা,
তোমার আশায় বসে
পথ দেখা,
বন্ধ ঘর, বন্ধ চোখ
শুধু, খোলা আছে দোর...

বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০০৯

তুমি যেন ঠিক মেঘ


...=...=...=...=...=...=...=...=...=...=...=...=...=...

আকাশ জুড়ে আছে কতকি,
মেঘ থাকে ওই আকাশে,
আকাশের বুকেই তো স্বর্গ,
মেঘ তাই তাকেই ভালবাসে।

তুমি যেন ঠিক মেঘ -
আকাশটাকে রাখো আঁধার করে,
রাতের আকাশ ঘুমিয়ে কাটায় দিন
তোমার সাথে দেখা কেবল ভোরে।

সূর্যালোকে উজ্জ্বল এই ধরা
আলো ছড়ায় আকাশ চারিদিকে,
তুমি যেন ঠিক মেঘ –
হঠাৎ এসে আকাশকে দাও ঢেকে।

স্বাধীন আকাশ ঘোরে জগৎ জুড়ে
দেখে কত চেনা অচেনা,
চাঁদ তারা সব আসে – চলে যায়,
তাঁর বুকে শুধু মেঘের আনাগোনা।

তুমি যেন ঠিক মেঘ –
চল মলীন মুখে,
হাজার হলেও সাথে থাক,
আকাশের সুখে দুখে।

আকাশকে তো কেউ চেনে না
চেনে তাঁকে তোমার দিকে চেয়ে,
হাসো তুমি, তাঁর মুখের হাঁসি –
কাঁদলে তুমি, সবাই বলে সে।

তুমি যেন ঠিক মেঘ –
জানো, আকাশই তোমার ঠিকানা
খেল তুমি লুকোচুরি তাই,
আকাশ যেন কিছুই জানে না।

আকাশ জানে, তুমি কি
আকাশ জানে, কে তুমি তাঁর
তাই তোমার হাজার ভুল ভুলে
বুকে তুলে নেয় তবে আবার!

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০০৯

আজ মন বড় চঞ্চল




আজ মন বড় চঞ্চল
মানে না বাঁধন
মন বড় চঞ্চল...

হারিয়ে যাবার তালে
ঘুরে ফিরে ডালে ডালে,
দমকা হাওয়ায় যেন
অদম্য অনল,
মন বড় চঞ্চল...

শিশিরে ভেজা রাতে
চাঁদ ছুঁতে চায় হাতে,
ভাবে সারা দুনিয়াই
করবে দখল,
মন বড় চঞ্চল...

মানে না বারনে আজ
বাঁধে না বাঁধনে আজ,
আজ মিশবে আকাশে
সাগর অতল,
মন বড় চঞ্চল...

রবিবার, ১০ মে, ২০০৯

আমার মন্তব্য

সচলায়তনে আজ প্রথমবার আমার কবিতা ছাপা হয়েছে। রবিঠাকুরকে নিবেদিত আমার এই কবিতা খানি আজ প্রকাশ পেয়েছে। আমি খুশি।

সচলায়তনের এক অতিথি লেখক লিখেছেন এই গল্পটি। নামঃ মা। গল্প পড়ে আমি এই মন্তব্য করলাম। আমি চাইবো তোমরা সবাই গল্পটি একবার পড়।


আমার মন্তব্য

কাল ছিল বিশ্ব মাতৃ দিবস। গল্পটা শুরু করেছিলাম এই ভেবে যে এই সম্বন্ধেই কিছু লেখা হয়তো হবে। ওই যেমন সবাই লেখে না? Happy Mothers’ Day!! ওই রকম কিছু। তার পর আস্তে আস্তে পড়া শুরু করলাম আর আমার নিজের মায়ের কথা মনে হতে লাগলো।

আমি প্রবাসি। মাকে দেখেছি ২ বছর ৩ মাস ১৪ দিন হয়েছে। মায়ের আওয়াজ শুনি, কিন্তু তাঁকে দেখার সুযোগ হয়ে ওঠে না। মা সারা জীবন আমার যত্ন করেছেন, যেমন সব মায়েরাই করেন; আমার ভালর জন্যে ভেবেছেন, যেমন সব মায়েরাই করেন; হয়তো সব মায়েদের চাইতে আমার মা আমাকে বেসি ভালবেসেছেন। কিন্তু আমি মাকে এই বুড়ো বয়সে ছেড়ে দিয়ে এখানে বাড়ি থেকে এতদুর বসে আছি – যেমন (তমাল ছাড়া) কোনো ছেলেই করে না। জীবনে কিছু এমন decision নিয়েছি যার দরুন আমার মা-বাবা কে আজ কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। আমি নই সেই ছেলে, যার জন্যে মা-বাবা নিজেকে গর্বিত মনে করেন।



গল্পটা পড়ে মনে পরে গেল আমার মায়ের মুখখানি। আমার মা? সবছাইতে সুন্দর মা। দুবছর আগে যখন আমি বাড়ি ছেড়ে আসছি, অটোতে উঠে বসেছি, মা তাকিয়েছিলেন, রাস্তার পাশে। অনেক কিছুই বলেছিলেন। জীবনে প্রথমবার আমি কোথাও যাচ্ছি এবং মা আমার সাথে Airport-এ আসেননি। হয়তো মা রোজ আমার কথা মনে করে কাঁদেন। কিন্তু আমি শুধু একটা কথা ভেবেই খুশি যে এখন মা দূরে আছেন বলে আমার চোখের এই জলবিন্দুগুলো দেখতে পাচ্ছেন না। হয়তো এই আমার সাজা এবং এই তার পরিহাস!

শ্রীতন্ময়

শনিবার, ৯ মে, ২০০৯

আছো শুধু তুমি গুরুদেব...



আজ আকাশে, আলো আছে ভরা
চাঁদের পাশে, আছে কত তারা
শুধু তুমি নেই, শুধু তুমি নেই গুরুদেব...

আজো জল পরে
আজো পাতা নড়ে
তবু সে পাতা আজ একা রয়ে যায়,
কাঁদে আজো হিয়া
ফোঁটে ক্যামেলিয়া
তবু তার স্থান নেই, কোন কবিতায়।

কাঁচ ভাঙে নিত্য
সে পুরাতন ভৃত্য
আজ তার কান্না আর কেউ দেখে না,
পাষাণ খয়ে যায়
ছোট নদি বয়ে যায়
তার চলা দেখে আর কেউ শেখে না।

আজ পঁচিশে বৈশাখে
সাজ সাজ চারিদিকে
তোমারই আলো, তোমারই আলো গুরুদেব...

মানসী, গীতাঞ্জলি,
বলাকা, সোনার তরী,
তোমার কবিতা আজো মুখে মুখে,
ডাক ঘর, বিসর্জন,
রাজা, অচলায়তন,
তোমার নাটক আজো সুখে দুখে।

তাই আজো আমাদের মননে,
বিরহে, মিলনে, আলয়ে, বিজনে,
আছো শুধু তুমি, আছো শুধু তুমি গুরুদেব...


তোমার কবিতা পড়ে বড় হয়েছি। তোমার লেখায় বাংলা শিখেছি। আজ তোমার জন্মদিনে আমার তরফ থেকে এই ছোট্ট নিবেদন। (কৈ, এবার তো স্বপ্নে দেখা দিলে না?) আশীর্বাদ করো।

মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০০৯

তুমি আছো তাই...

হাজার বছরের কান্নার পর তোমাকে পেয়েছি। শত বছরের অপেক্ষার পর তোমাকে পেয়েছি। কবিতাতে তোমাকে পেয়েছি, কাব্যে তোমাকে পেয়েছি। তোমাকে পেয়েছি আমার প্রত্যেকটি গানে; প্রতিটি সুরে। প্রতিটি শ্বাসে তোমাকে পেয়েছি। প্রতিটি নিশ্বাসে তোমাকে পেয়েছি। ঘুম থেকে উঠে প্রথম সূর্য রশ্মির মতো করে তোমাকে পেয়েছি। মাঝরাতের তরতাজা চাঁদের আলোর মতো করে তোমাকে পেয়েছি। বাঁশবাগানের শন শন শব্দে, নদির কল কল শব্দে; আকাশে, বাতাসে; ভ্রান্তিবিলাসে তোমাকে পেয়েছি। তোমাকে পেয়েছি আমার শরীরে বহমান প্রত্যেক রক্ত বিন্দুতে। তোমাকে পেয়েছি পাহাড়ে, মরুতে, সাগরে সিন্ধুতে। আনাচে কানাচে, রাস্তার মোড়ে, বাগানের কোণে, আম্র কাননে, গাছের ছায়ায়, ফুলের মালায়, বালিশের তলায়, দড়জার ফাঁকে, রান্নাঘরের তাকে, কলতলার জলে, সকালে, দুপুরে, বিকেলে, রাত-বিরেতে তোমাকেই তো পেয়েছি।

তুমি আমার জীবন। তুমি আমার মরন। তুমি আছো তাই আমি আছি। তুমি থাকবে তাই আমিও থাকবো। ভালবাসি তোমাকে। তোমাকেই ভালবাসবো। তোমাকেই বুকে রাখবো। তোমারই বুকে থাকবো। তুমি আছো, তাই সব আছে। তুমি থেকো – আমি তো আছিই!

শনিবার, ২ মে, ২০০৯

তোমাতে আমি...



চোখেতে তোমার আমি দেখেছি মুক্তি,
চোখেতে তোমার আমি পেয়েছি নিজেকে খুঁজে,
তোমাকে নিজের করে নিতে চেয়েছি
চোখেতে তোমার তাই, রয়েছি – মুখ বুজে।

দুহাতে তোমার লেখা আছে আমার ভাগ্য,
দুহাতে তোমার আছে আমার ভবিষ্যৎ ও বর্তমান,
তোমার হাতে আমার হাত রেখে শপত করেছি
দুহাতে তোমার তুলে দিয়েছি আমার মান, অভিমান।

বুধবার, ১৫ এপ্রিল, ২০০৯

শুভনববর্ষ


!!! শুভনববর্ষ ১৪১৬ !!!

...আপনার জীবন হয়ে উঠুক মঙ্গলময় এবং আনন্দময়...


আমার দূরভাষ যন্ত্রে পাওয়া কিছু ছোট্ট সংবাদ বার্তা এখানে দিলামঃ

নতুন বছর এলো ছুটে,

সকল বাঁধা গেলো টুটে,

বছরটা যাক তোমার ভাল

মুছিয়ে আঁধার ফুটুক আলো

নতুন বছর দারূন কাটুক,

এই আশা মনে থাকুক...




নব প্রভাতের নব রবির কিরণে

নব পাখির গুঞ্জনে

নব প্রাণের আশায়

নব ভালবাসায়

তোমাকে জানাই নব বর্ষের প্রীতি, শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও ভালবাসা...




পুরোণো যত হতাশা দুঃখ অবসাদ,

নতুন বছর এগুলোকে করুক ধুলিস্যাৎ

সুখ আনন্দে মুছে যাক যাতনা

শুভনববর্ষে সবার জন্যে শুভ কামনা...





ভাল থাকুন

সুস্থ থাকুন

লিখতে থাকুন

...ভগবান সবার মঙ্গল করুন...

শুক্রবার, ৩ এপ্রিল, ২০০৯

সংবাদ।

আজ মনটা বড়ই মেঘলা; আকাশটাও। সেই সকাল থেকেই। দিনটা যেন কোনমতেই চলছে না। ঠিক ওই লাল ফুল ফুল কাপড়ে ঢাকা টেলিফোনটার মত। হুম... কি করা যায়? সেটাই ভাবছিলাম। হঠাত্‌ দড়জায় কড়া নাড়ার শব্দ। আরাম কেদারা ছেড়ে ওঠার ইচ্ছে তো ছিলই না, তবু উঠতেই হল। হাতের কাগজটা টেবিলে রেখে উঠলাম। ঘড়িতে তখন ঠিক আড়াইটা বাজে। আমার কলিংবেলটা কিচিরমিচির করে উঠলো।

“যাচ্ছি।”

দড়জা খুলে যা দেখলাম তা দেখার একদম ইচ্ছে ছিল না। ভাবতেই পারিনি। দড়জায় দাড়িয়ে আমার ছোটবেলার বন্ধু, কিংশুক; মানে বুলু। আমাদের পাড়ার ছেলে। আমাদের পাশের বাড়ির দোয়েল বুলুর মামাত্তো বোন। ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাড়িতে ওর আসা যাওয়া ছিল। স্নেহকাকু খুব স্নেহ করতেন ওকে। না, সত্যি স্নেহ করতেন। স্নেহকাকু যখনই বাজারে যেতেন আমাদের জন্যে লজেঞ্চুস আনতেন। একটা আমার, একটা তাতাইয়ের, একটা দোয়েলের আর ঠিক দুটো বুলুর জন্যে। কেন কে জানে। তবে খুব ভালবাসতেন উনি বুলুকে। খেলাধুলাতেও বুলু ছিল এগিয়ে। তাতাই বল করতো, বুলু ব্যাট করতো আর আমি আর দোয়েল ফিল্ডিং করতাম। মানে, বেশিরভাগ সময় তাই হোত। আমরা কখনই অভিযোগ করিনি। আসলে জানতাম না যে ও বেশি ব্যাট করে ফেলছে এবং এটা করা ঠিক না – আমাদেরও তো ব্যাট করতে হবে! আসলে এই কথাটা আমরা কেউই জানতাম না। জেনেছিলাম বড় হয়ে যে নিজেরটুকু ছিনিয়ে নিতে হয়। কেউ দিয়ে দেয় না। পুরোপুরি বুঝলাম যখন কলেজ থেকে ফিরে এসে দেখলাম যে তাতাই আর দোয়েলের বিয়ে, আমাদের বাড়ির উঠোনে। কি ফুর্তি সবার। বুলুতো যেন সাপের পাঁচ পা দেখেছে – মনে হচ্ছিল ওই দোয়েলের সেই মরে যাওয়া ভাই। দোয়েলের বাবা – মা, আমার বাবা, স্নেহকাকু আর তাতাইয়ের বাবা – মা সব্বাই নাকি পিকনিকে যাবে ওদের দুজনকে নিয়ে! আমার জন্যে অপেক্ষা করা হচ্ছিল। কি আদিক্ষেতা, বলো। সময়ে বলতে পারিনি; যা নিজের ছিল তা কোনদিন মুখ ফুটে চাইতে পারিনি। ভেবেছি তা তো আছেই – থাকবে। কিন্তু এমন হয়নি। মুখ বুজে পিকনিকে গিয়েছিলাম। টমেটো, শশা, কাঁচা লঙ্কা, পেয়াজ আর বাঁধাকপির পাতা দিয়ে সুস্বাদু স্যালাডও বানিয়েছিলাম। অদৃষ্টের দোহাই দিয়ে সব মেনেও নিয়েছিলাম। কষ্ট হয়েছিল যখন ফেরাযাত্রার দিন হঠাত্‌ই দোয়েল আমার পা ছুঁয়ে সবার সামনে আমায় দাদা বললো! ভোম্বলদা! ধুর্‌, দাদা না ছাই! এতদিন কোথায় ছিল এই বোনটা আমার? যখন মায়ের আলতা চুরি করে এনে পায়ে লাগিয়ে দিতাম; যখন স্নেহকাকুর দেওয়া লজেন্সটা বা বাবার আনা নতুন কলমটা হাসিমুখে হাতে তুলে দিতাম; যখন এই হতভাগা তাতাইয়ের মার থেকে ওকে বাঁচাতাম, তখন তো কোনোদিন একবারের মতোও দাদা বলে ডাকেনি। যা শালা! হাত তুলে আটকে দিতেই দুহাতে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। এতদিন পর, এই শেষ সময়ে এক সেকেন্ডের জন্যে না কাঁদলে কি হোত না? যখন নিজে থেকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, তখন তো এক মিনিটের বেশি এক সেকেন্ডও থাকেনি। “মা দেখে ফেলবে; বাবা দেখে ফেলবে।” – আমার ঠাকুরদাদা দেখে ফেলবে!! এখন? এখন তো পাড়াশুদ্ধ মানুষ দাঁড়িয়ে। এখন কই, লজ্জা করছে না? ওর কান্না দেখে ওর মা আরো কাঁদলেন। যাই হোক, ওরা কোলকাতা চলে যাবার পর আমিও জীবনকে একেবারে ত্যাগ করে দিয়েছিলাম। বুলু চলে গেল ইম্ফল, ডাক্তারি পড়তে। আমি রয়ে গেলাম একা। মন্টুর দোকানে চা খেতাম; হরিদাসপুরের মাঠ চষে বেড়াতাম; আলুকাবলি খেতাম আর চুটিয়ে সিনেমা দেখতাম। একা ছিলাম, কিন্তু সুখে ছিলাম। হয়তো। অনেকদিন পরে একটা কোলকাতার মোবাইল নম্বর থেকে একটা ফোনও এসেছিল। তাতাই হঠাত্‌ করেই তথাগত হয়ে গিয়েছিল। আর দোয়েল হয়ে গেল সোনাই! কথা বলতে হলো তাই বললাম। বললাম স্নেহকাকুর কথা। তাতাই কিছু বললো না। দোয়েল তো উনি নেই শুনে কেঁদেই অস্থির। বললাম বলাই কাকা আর মিনু মাসিও মারা গেছে। বললাম দোয়েলদের বাড়ীরই জল্পাই গাছ, কদম গাছ আর দু চারটে সুপুরি গাছ কাটা পড়বে নতুন রেল লাইনের জন্যে জায়গা করে দিতে। আরো অনেক কথা বলেছিলাম – আজ আর মনে নেই। যা মনে আছে তা হলো যে ও বলেছিল হরিদাসপুরে আসতে চায়, কিন্তু তথাগতর অফিসে ছুটি নেই বলে আসতে পারছে না। আমি শুধু ‘আচ্ছা’ বলে রেখে দিয়েছিলাম। সেই শেষ কথা। সবসময় ভাবতাম কোথাও ভুল হয়েছে। তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু, সেও তো আমার জন্যে এক দন্ডও অপেক্ষা করে নি। ঠিক টাকার পেছন পেছন চলে গেল। একবার ভাবলোও না আমার কথা – আমাদের কথা! ধোকেবাজ় কহিঁকা।

এর পর গত এতোগুলো বছর ভাবিনি ওদের কথা। বুলুর কথাও না। সে ইম্ফল থেকে সোজা যে বিলেত গিয়েছিল, তার পর আর আজ এই দেখা।

“একটা খবর আছে রে। ভেতরে আসবো?”

যেন বাজ পরলো আর আমি এক ঝটকায় হাজার মাইল দূরে এই জায়গায় এসে পরলাম! ভুলেই গিয়েছিলাম বুলু দড়জায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওকে ভেতরে ঢুকতে বলে জানালাটা খুলে দিলাম। একটু আলো না হয় আসুক ঘরে। সকাল থেকে আর খোলাই হয় নি। ও কেমন যেন ভয়ে ভয়ে এসে বসলো।

“কি খাবি? কোত্থেকে আসছিস?”

“দোয়েল আর নেই রে।”

“নেই মানে?”

“নেই মানে নেই। কি বললে বুঝবি হতভাগা? মারা গেছে। প্রেগ্ন্যান্ট ছিল। চতুর্থ মাস চলছিল। অফিস যাবার সময় কোলকাতার চক্ররেল থেকে পা পিছলে পরে রেলের তলাতেই তলিয়ে গেল। আমি জানলাম কালকে। তোকে ফোনে পেলাম না। তাই নিজেই এলাম বলতে।

“তাতাইটা বখাটে গেছে। চাকরি বাকরি নেই আর। বউয়ের পয়শায় চলতো। তাই তো এই অবস্থাতেও রোজ ট্রেনে করে দোয়েলকেই অফিসে যেতে হতো। অফিস করতে হতো। টাকা রোজগার করে ঘর চালাতে হতো। ঘটনাটা ছেপেছিল দৈনিকে, পরশুদিন। দেখিসনি নাকি? কিরে, শুনছিস কি বলছি? কিরে? এই ভোম্বল – বল কিছু। চুপ করে কেন রে?”

বুলু এক শ্বাসে বলে গেল কথাগুল। কিছু শুনলাম, কিছু শুনলাম না। কিছু বুঝলাম, কিছু বুঝলাম না। কিছুই বলার ছিল না আমার।তাই কিছু বললাম না।

শুক্রবার, ২০ মার্চ, ২০০৯

তোমারে হলো না শেখা।



আর কত গান গাইব প্রিয়
আর কত গীত লিখবো?
আর কত বার খুঁজবো তোমারে
আর কত তবে শিখবো?

তুমি আছো তাই
তোমাতে আমি আমারে খুঁজে পাই
তুমি আছো তাই
তোমার পথে নিজে নিজে চলে যাই।

তোমার ঠোঁটে হাজার প্রশ্ন
তবু তোমার বুকেতে আমি,
তোমার চোখের কাজলে কাজলে
আঁধার আসিল নামি।

সেই আঁধারে তোমারেই দেখি
যেদিকেই আমি চাই
আমার পথের প্রতি মোড়ে আমি
তোমারেই শুধু পাই।

তবু অভিমান হৃদয়ে আমার
আছে কপালে হয়তো লেখা
হাজার বছর তব সাথে তবু
তোমারে হলো না শেখা।

।। ছবি নেওয়া হয়েছে এখান থেকে ।।

মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ, ২০০৯

চিঠির জবাব

ছবিতে ক্লিক করে বড় করুন

শুক্রবার, ১৩ মার্চ, ২০০৯

বুড়োর ভেলকি

হঠাৎ একটা কৌতুক মনে পরে গেল। ভাবলাম এখানে লিখি। ছোটবেলায় শোনা। আশা করি ভাল লাগবে।

একবার একটি লোক পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। নতুন এক গ্রামের উদ্দেশ্যে। অচেনা গ্রাম, অচেনা গ্রামের পথ। লোকটি রাস্তার পাশের মানুষদের জিগেস করতে করতে অনেকটা পথ চলে এসেছিল। হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় এসে দেখলো যে জনমানবহিন এক মোড়ে এক বৃদ্ধ বসে আছে। লোকটি রাস্তা জিগেস করার জন্যে এগিয়ে গেল।

“দাদু, এখান থেকে হরিদাসপুর যেতে কতক্ষণ সময় লাগবে?”

বৃদ্ধ নিশ্চুপ। কিছুই বললো না। লোকটি ভাবলো হয়তো বৃদ্ধ কানে কম শোনে। সে আবার জিগেস করলো, এবার একটু জোড় গলায়।

“এই যে দাদু, শুনছেন?”

বৃদ্ধ চোখ তুলে তার দিকে তাকালে সে আবার জিগেস করলো, “এখান থেকে হরিদাসপুর গেরামে যেতে কতটা সময় লাগবে?”

কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বৃদ্ধ আবার চোখ ঘুড়িয়ে নিল। আচ্ছা মুশকিল তো! লোকটা আরো কয়েকবার জিগেস করে দেখলো, কিন্তু বৃদ্ধ কোনোভাবেই কিছু বললো না। নিজের মনে কিছু বিড়বিড় করলো, কিন্তু কিছুই বললো না। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়ে লোকটি এগিয়ে গেল রাস্তা ধরে। ভাবলো কিছুদূর এগিয়ে অন্য কাউকে জিগেস করে ঠিক হদিস করে নেবে। কিছুদূর হাঁটার পর সে পেছন থেকে আওয়াজ শুনতে পেল।

“এই ছোকরা, শোন।”

সে ঘুরে দেখলো সেই বৃদ্ধ তাকে হাত তুলে ডাকছে। রাগে গজ গজ করতে করতে সে এগিয়ে গেল। বৃদ্ধ কিছু বলার আগে সে নিজেই বলে উঠলো, “কি হে বুড়ো, এতক্ষণ যখন জিগেস করছিলাম, তখন মুখ থেকে একটা আওয়াজ বের করলে না। এখন আবার ডাকছো? কি, কি হয়েছে শুনি?”

বৃদ্ধ মৃদু গলায় বললো, “এইখান থেইকে হরিদাসপুর যাইতে তোমার এই আধা ঘন্টা খানেক লাইগবে, বাবা।”

লোকটার মাথা গেল গরম হয়ে। এতক্ষণ ধরে এতবার জিগেস করার পরেও বৃদ্ধ কিছুই বললো না, আর যেই কিনা সে নিজেই পথ খুঁজে নেবার উদ্যোগ নিলো, সাথে সাথে বুড়োর মনে হল ওকে পথ বাতলে দেবার কথা? বুড়ো ভাম!

বৃদ্ধ নিশ্চয়ই তার মনোভাব বুঝতে পেরেছিল। তাই লোকটি কিছু বোঝার আগেই সে বলে উঠলো,
“বাবা, তুমি যখন জিইগেস করলায় কতক্ষণ সময় লাইগবে, তখন তো আর আমি তোমার হাঁটার গতি জাইনতেম না। তাহলে তোমারে বলি কিভাবে যে ঠিক কতক্ষণ লাইগবে? তাই যখন তুমি হাঁইটা গেলা, আমি দেইখে নিলাম তোমার গতি এবং হিসেব কইরে দেইখলাম যে তোমার ঠিক আধা ঘন্টা খানেক লাইগবে।”

বুধবার, ১১ মার্চ, ২০০৯

আজ দোল পূর্ণিমা।

আজ হোলি। দোল পূর্ণিমা। নানা রঙের নানা খেলা – আবীর, পিচকারি, জল-বেলুন থেকে আরম্ভ করে মিনা রঙ, ভাঙ এবং কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া। সব কিছু মিলিয়ে হোলি, বা ছোটোবেলায় যেমন জানতাম – রঙ খেলা।

আমাদের বাড়িতে রঙ খেলার রমরমা ভাব খুব একটা ছিল না। তবে এটা ঠিক যে অন্যান্য দিনের চাইতে এই দিনটা ছিল অনেক আলাদা। ছোটোবেলায় সব বাচ্চাদের মতই আমারও রঙের ভয় ছিল। আমি রঙ খেলতে চাইতাম না। বন্ধুরা সবাই যখন ডাকতে আসতো, তখন আমি মায়ের আঁচলের তলায় অথবা আমার ঘরে, দড়জা লাগিয়ে বসে থাকতাম। তবে মা পাঠিয়ে দিতেন বাইরে – সবার সাথে। কখনো কান্নাকাটি করতাম – যেতাম না। আর দিন গড়িয়ে গেলে খুব কষ্ট হতো। আবার কখনো বেরোতাম – বন্ধুদের সাথে – সারা পাড়াময় ঘুরতাম আর যাকে পারি রঙ দিতাম। খুব ছোটবেলার কথা। একটু বড় হবার পর আর বের হতাম না। বাড়িতেই খেলতাম – মা, মাসি, মামি, কাকিদের সাথে ও ছোট ভাই বোনদের সাথে... ব্যাস। বন্ধুরাও ব্যাস্ত হয়ে গেল এবং রঙ খেলার নিজেদের নিয়ম কানুন করে নিল। অনেক লোক আসতো বাড়িতে তখন – কেউ বাবা মায়ের পায়ে রঙ দিতে অথবা নিজেদের পায়ে রঙ নিতে। অদ্ভুত ব্যাপার ছিল। আমি ছিলাম পাশাপাশি, তবে না থাকার মতো করে। তখন মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো রঙ খেলার। মৈত্রীর সাথে। মনে হতো ও যেন সবসময়ই পাশে থাকে। মনে হতো একটু আবীর ওর নাকে, গালে, হাতে ছুঁইয়ে দিই। মনে হতো ওকে মিনা রঙের বালতি ভর্তি জল দিয়ে ভিজিয়ে দিই। একটা পিচকারি ভর্তি রঙ ওর গায়ে ছড়িয়ে দিই। কিন্তু সেই আশা আর পূর্ণ হতো না। ওর সাথে কাখনই রঙ খেলতে পারি নি। আমরা কাখনই এমন দিনে একসাথে ছিলাম না। একে অপরের ছবির মধ্যে রঙ লাগাতাম, আর চোখের জল ফেলতাম। এখন সাথে থাকি – এখন আর ওই ভাবে রঙ খেলা হয় না।

যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেলাম, তখনোও রঙ খেলা হতো, তবে আমি খুব একটা যেতাম না। একবার ভাঙ্গের লাড্ডু খেয়ে কয়েক ঘন্টা এক জায়গায় বসে ছিলাম – পরে জেনেছিলাম যে আমি নাকি কোথাও যাইনি বা কারো সাথে কথাই বলিনি ওই সময়টাতে। তারপর যখন বাঙ্গালোরের কলেজে ভর্তি হলাম, সেবারের হোলি ছিল মহান! হে হে হে। সত্যি মহান। আমরা সব্বাই মিলে সারাদিন রঙ খেল্লাম। ভাঙ খেলাম। হই চই করলাম। একটা জলের ট্যাঙ্কে রঙ ভর্তি করে সব্বাই মিলে ডুবোলাম। তারপর ছাদে গিয়ে জলের কলের তলায় বসে একজন আরেক জনের শরীর ঘষে ঘষে রঙ উঠালাম। খুব মজা হয়েছিল। তখনই প্রথম জানলাম যে হোলিকার সেই ঘটনার উপর ভিত্তি করে এখনও হোলিকার ঘর জ্বালানো হয়। ভালই ছিল বিকেলের এই অনুষ্ঠান।


এবার আর রঙ খেলার বিশেষ অবস্থা ছিল না। ওর অফিশ, আমারও অফিশ। খেলবো কোথায়? হয়তো গতবারের মত আজকে বাড়ি ফিরে দুজনে মিলে একটু খেলবো। তবে আজকে অফিশে এসেই যা হলো! হঠাৎ করে কোনো কথা নেই বার্তা নেই কিছু ভুত-প্রায় সহকর্মি এসে জুটলো আর রঙ্গে রঙ্গে ভরে গেল সবাই। তার পরই আমার এই অবস্থা। যাক, ভালই হলো। তবে মৈত্রী থাকলে আরো ভাল লাগতো। আরো একদিন তো আছে – দেখা যাক কি করতে পারি।

সবশেষে সব্বাইকে জানাই দোল পূর্ণীমার অশেষ শুভেচ্ছা, আন্তরিক প্রীতি ও ভালবাসা। সবার জীবন হয়ে উঠুক আনন্দময়, রঙ্গিন এবং শুখময়। সবার হোলি শুভ হোক।

শনিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

পুরানো সেই দিনের কথা


বাড়ি ছেড়েছি অনেক দিন হলো। ছেড়েছি ঠিক নয়, তবে বাড়ি যাইনি দুই বছরেরও বেশি। প্রায়ই মনে হয় বাড়ির কথা। প্রায় রোজ কথা হয় আমাদের বাড়ি, আমাদের গ্রামের বাড়ি, ওখানকার লোকজনের কথা। কত মজার ছিল আমাদের ছোটবেলা। বড়দা, বড়দি, মেজদি, ফুলদি, প্রীতম, ববি, টুপাই – সবাই ছিলাম একসাথে... কত মজার দিন ছিল সেই ছোটবেলা। বড়দি, মেজদি আর ফুলদি হলো বড় – অনেক বড়, তাই আমাদের দলে ছিল না ততটা। আমরা পাঁচজন অনেক ভাল ভাল সময় কাটিয়েছি একসাথে। বাড়িতে বড় উত্‌সবের সময় মাছ ভাজা চুরি করা থেকে আরম্ভ করে, গামছা দিয়ে ছুনো মাছ ধরা, সবাইকে জল, লেবু আর লবন দেওয়া অথবা সারা গ্রাম ঘুরে ঘুরে বড় বড় কড়াই, ডেগ, হাতা, গ্লাস, খন্তি জোগাড় করা ছিল আমাদের কাজ! বড়দা বড় হলেও আমিই ছিলাম মাথা। আর ববিও ছিল, আমার সাথে; আমার সাথি হয়ে; আমার ছায়া হয়ে – আমার পায়ে পায়ে। এখন সবাই আলাদা হয়ে গেছে। আর আমি ও ববি হয়ে গেছি এক! আমার সৌভাগ্য যে আমি এখনো ওর সাথে আছি – সারা জীবনের জন্য। কত কিছুই করেছি ছোটবেলা, জলেফার ওই বিশাল বাড়িতে – আজ হয়তো ওই বাড়িতে আমার বা ববির আর জায়গা নেই...

মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

পার্কে একদিন...


আমি চাই তোমাকে, যদি তুমি বোঝো – যদি তুমি আমাকে নিজের করে নাও।

আমি তোমাকে ভালবাসি, তুমি জানো।

হ্যাঁ আমি জানি। তবে কি তুমি কোনদিন বলবে না? কোনদিন মুখ ফুটে বলবে না?

কেন? মুখ ফুটে বলতে হবে কেন? এত বছরের এত অপেক্ষার পরে তুমি এসেছো। এত রাত একা একা কাটানোর পরে তোমাকে কাছে পেয়েছি আজ। এতকিছু করে তোমার সাথের এই কিছুক্ষণ থাকার সৌভাগ্য। তুমি কি দেখ না? তুমি কি বোঝো না?

না, আমি দেখি না। আমি দেখতে চাই না। আমি দেখতে চাই তোমাকে, আর শুনতে চাই তোমার মুখে। আমি এতবছর তোমাকে কাছে পাইনি। যা ভাবার ছিল, যা বলার ছিল সবই শুধু বুঝে নিয়েছি। তোমার বলতে হয়নি – তুমি বলনি। সবসময় শুধু আমিই বুঝে নিয়েছি। এখন তো তুমি কাছে আছো – চোখের সামনে। তুমি আছো, আমি আছি। তাহলে কেন বলবে না?

হ্যাঁ, বলবো।

তাহলে বল। কত কিছুই তো তোমার বলার ছিল। আমি যখন ফোন করতাম তুমি বলতে তোমার কত কথা আছে বলার। ফোন রাখতে চাইতে না। এখন কি হয়েছে? এখন বল না। বল না গো।

আমি তোমাকে ভালবাসি।

আমিও। আমিও তোমাকে ভালবাসি।

আমিও শুনতে চাই তোমার সব কথা। যে কথা তুমি বলেছো ফোনে বলা যায় না। তুমি বলেছিলে বলবে। এখন বল। আমি সেই কবে থেকে বসে আছি তোমার সব কথা শোনার জন্য। বল না সোনা, আমি শুনি।

কেন তুমি এমন? তুমি কখন কি আমাকে আর বুঝবে না?

মানে? এখানে বোঝা না বোঝার কি হল? আমি তো...

থাক, আর বলতে হবে না। হয়তো আমিই বেশি চেয়ে ফেলি। বারবার ওই এক ভুল করে ফেলি আমি।

না। শোন। আমি বলছিলাম...

কি বলছিলে? বল।

মানে, এখন তো সন্ধ্যা হয়ে এলো। এখানে আর বেশিক্ষন বসা যাবে না।

বসা যাবে না? কেন বসা যাবে না?

না, মানে এখানে তো...

তোমার এখানেও ভয়? এখনও ভয়? কেন? এখন তো আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। তাহলে সন্ধ্যার পর পার্কে বসে থাকলে কি হবে?

কে কি বলবে?

বলুক না। আমরা শুনবই বা কেন? এতদিন তো কেবল অন্যের কথা ভেবে ভেবে কিছুই করতে পারি নি। এখনও করতে দেবে না?

হ্যাঁ? কি করতে চাও বলনা। সবই করতে পারবো। বল না...

না থাক। তুমি ঠিকই বলেছো। চল উঠি।

না, বোস না। এখনো তো ঠিক সন্ধ্যা...

হয়েছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখন আর আলো নেই, দেখ। একটু পরেই রাত নেমে আসবে। গভীর রাত। কালো, কুচকুচে রাত। এই রাতের আর শেষ নেই। এই রাতের হয়তো সকালও নেই। চল উঠি এখন।

কিন্তু সোনা...

চল।

(১৯/২/২০০৯ ২:৫৭) সবাই পড়ার জন্যে এখানেও পোস্ট করলামঃ The Writer’s Lounge, তবে, হিন্দি ভাষায়।

বৃহস্পতিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০০৯

আমি মৈত্রী...

আমি? আমি প্রেম
আমি উদার, অসীম, মুক্ত ভালবাসা –
আমার হৃদয়ে এখনো রয়েছে,
মহামিলনের আশা।
আমার হাতে, মাথায়, চোখে
নব প্রভাতের গান
আজও। আমি বেঁচে আছি,
জীবন আমার মান, অভিমান
অহংকারে ঘেরা
আজও আমি সেরা।
আমার মধ্যে আজও রয়েছে
প্রভাতের প্রভারাশী
আমার মধ্যে রয়েছে হরি –
তাই আমি হরিদাসি।
হাঁসি? আজও আছে
আমার আঁচলে কোথাও
তারই মাঝে লুকিয়ে আছে
গোপন কোনো ব্যথা-ও।
যে ব্যথা – কাউকে যায় না বলা
শুধুই জলে ভাসিয়ে চিবুক,
শুধুই গন্ধে ভরিয়ে এ’বুক,
নিশ্চুপ পথ চলা।
আমি? আজ মুক্ত,
আজ নেই কোনো হাতের ইসারায়
নিজেকে উজার করার ক্ষিদে।
আজ সবই সুপ্ত, গভীর বাসনায়।
আমার প্রতি শ্বাসে আজ
কেবলই আমার বাঁচা
আমার ভেতরে, আমার বাহির
আমারই গড়া খাঁচা –
আর সেখানেই থাকি আমি –
দূর হতে দেখি একলা আকাশ
মেঘ নিয়ে গেছে উড়িয়ে বাতাস;
তারই বুকে দেখি তারাদের বাস –
যখন আঁধার আসে নামি।
আমি তবু রই শান্ত
সহস্রবার পথ চলে চলে
আজ হয়েছে পরিশ্রান্ত।
তবু কি গিয়েছি থেমে?
কাটিয়েছি কত ঘুমহীন রাত
জীবনে সয়েছি কত প্রতিঘাত
কত আঁধারে বাড়িয়েছি হাত
ধরেনিতো কেউ নেমে!
আমি বিশ্বাস, আমি সত্য
আমি চঞ্চল, আমি নিত্য
আমি নগের চূড়ায় বসিয়া দেখেছি
প্রেমের নগ্ন নৃত্য।
আমি পেয়েছি সবই, তাই
চাওয়ার ছিল না কিছুই।
আমি চাইনি কখনো –
চাইনি কারো দান, আমি
চাইনি কারো গান
হতে। যা পেয়েছি তাই নিয়ে আমি
সুখেই রয়েছি এখনো।
তবু আমার সভ্য জগতে
হঠাত্‌ এ’দিন আমারই কেউ
হাত বাড়িয়ে ডাকলো আমায়
বললো, “সাথে যাবে?”
বুঝিনি সেদিন, কে সে ছিল
প্রাণেতে আমার এলো কিনা এলো
নাকি দূর হতে ছলে শুধু গেল
সত্যি কি মোর হবে?
খেলে গেল সে
নিদারূণ খেলা, আমার
প্রাণেরে নিয়ে। বুঝলো না
মোরে একবার!
খেলার পুতুল, যেন আমি তার!
ছলে গেল, চলে গেল –
বলে গেল, “সাথে রব।”
জানি সে মিথ্যে;
তবু মনে ভাবি –
আমি তো বলিনি, সেই
বলে গেল সবই,
জানলো না মোর প্রাণ কি চায়
জানলো না –
ভালবাসা বড় দায়।
কাপুরুষতার সীমা পার করে
দূরে সরে গেল হারিয়ে;
দেখলো না ফিরে, রয়েছি দুয়ারে
আজও আমি হাত বাড়িয়ে!
আমি প্রেম, আমি মৈত্রী
সদাপ্রসন্ন, আমি ধরিত্রী।
আমাতে রয়েছে ত্যাগ –
আমি যে নারী, সহ্যের সীমা
আমি যে পারি সব!
আমাতে বেদনার লেশটুকু নেই
আমার যা আছে সবই আমি দিই।
যা ছিল আমার, নিয়ে গেছে সেইকরি নাতো কলরব।
তবু আমি ভুল
তোমার, সবার চোখে
পারিনি যে আমি
দাঁড়াতে, তারে রূখে!
হয়তো সেদিন
প্রেম এসেছিল বুকে –
ভেবেছিলাম, তারই সাথে
থাকবো সুখে।
তাই, ক্ষমা করো আজ মোরে
আপ্ন ভুলায়ে, আপ্ন ভেবেছি তারে
ভেবেছিনু সে আকাশ প্রমাণ
এত বড় বুক, ভরে আছে প্রাণ –
কিন্তু বুঝিনি সব মেঘ তরে
তার যে সমান টান।
ভাল কি বেসেছে সে, কভু?
নাকি আরেকটা ফুল হিসেবে
আমার গন্ধ কেবল শুঁকেছে?
হয়তো মনের ভুল আমার।
তবু আমি প্রেম
উদার, আমি মুক্ত ভালবাসা,
আমার মননে, প্রভাত স্বপনে
মহামিলনের আশা।
জানি আসবে না সে ফিরে –
তবু বাঁধি ঘর – আকাশে, বাতাসে
সাগরে, বালুচরে,
- একবার তার দেখা পা’ব বলে
- একবার তার ছোঁয়া পা’ব বলে
- একবার সির নামাবো তার চরণে –
- একবার তারে জড়াবো এ’ বুকে
- একবার মোরা হাসবো সুখে
- একবার, যদি একবার শুধু
- - ফিরে আসে মোর জীবনে।।

২৪/০৩/২০০৪
মালঞ্চনগর, আগরতলা।
{ অনেক বছর আগে আমার লেখা এই কবিতা। মৈত্রী, আমার স্ত্রী। তখন, প্রেমিকা। যেন মৈত্রী কিছু বলতে চাইছিল। এই কবিতা তারই বহিঃপ্রকাশ। }

শুক্রবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০০৯

বিবাহবার্ষিকী

ছবিতে ক্লিক করে বড় করুন।

বুধবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০০৯

শুভ মকর শঙ্ক্রান্তি


মঙ্গলবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০০৯

ব্লগের ধান্দা কি মন্দা চলছে?

লেখা এবং পড়া দুটোই একসাথে হাতে হাত ধরে চলা ফেরা করে। মানে আপনার পড়া ঠিক ততটাই জরুরি, যতটা লেখা। নিয়মিত না পড়লে লেখা কষ্টকর হয়ে যায়। তাই আমি প্রায়ই বাংলা ব্লগ বা অন্যান্য ওয়েবসাইট পড়ি। ইদানিং দেখছি যে বেশ কয়েকটি ব্লগ এমন আছে যাতে বহুদিন যাবত নতুন কোনো লেখা লিখা হয়নি। অনেকগুলো ব্লগ এমন আছে, যা খুব সুন্দর করে শুরু করা হয়েছিল, কিন্তু এখন আর সেগুলোতে লেখা হয় না। অনেক ব্লগ এমনি এমনি পরে আছে, যেন অবিভাবকহীন। কেন? জানি না। হয়তো আমি বাংলা ব্লগের জগতে যতটা আগ্রহ নিয়ে এসেছি, ততটা আগ্রহ এখন আর এখানে নেই! জানি না, তবে যখন দেখি যে মার্চ ২০০৭ বা আগস্ট ২০০৮ এর পরে আর কোন লেখা হয়নি, তখন খুব কস্ট হয়। এর আরেকটা কারন হতে পারে যে আমার মত এত সময় কারো নেই যে ব্লগ লিখে লিখে নস্ট করবে। হা হা হা হা। সে যাই হোক, মোদ্দা কথাটা হল যে বেশ কিছু ব্লগ এখন আর আপডেট করা হচ্ছে না। আমার ব্লগে যে সব লিঙ্ক লাগিয়েছি, সেগুলোর মদ্ধেও কটা ব্লগ আছে যেখানে এখন আর লেখা হয় না।

এই তো হল আমার পড়া ব্লগ আপডেট। এবার কিছু ভাল খবর দিই। হ্যাঁ, কিছু খবর আছে বৈকি।

কিছুদিন আগে আমি অন্য একটি ব্লগে একটি ইংরেজি গল্প লেখার প্রতিযোগিতায় আমার একটা গল্প ছাপাই। এক মাসের এই প্রতিযোগিতায় অনেক লেখক লেখিকা গল্প লিখেছেন, এবং শেষ পর্যন্ত ৬ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে সবার চেয়ে ভাল লেখার জন্যে এবং একটি করে ব্যাজ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন হয়েছেন প্রথম, দ্বীতিয় ও তৃতীয়। আমার লেখাটা প্রথম ৬ জনের মধ্যে নেই, তবে পড়ুয়াদের ভোটে সবচাইতে জনপ্রীয় হয়েছে আমার লেখাটা এবং আমাকেও একটা ব্যাজ দেওয়া হয়েছে, যেটা আমি লাগিয়েছি আমার ইংরেজি গল্প/কবিতা-র ব্লগে। যদি কারো ইচ্ছে হয় তো এই লিঙ্কে গিয়ে পড়তে পারেন আমার লেখা ওই গল্প ও আরো অন্য ইংরেজি, হিন্দি বা বাংলা লেখা। ভাল লাগলে জানাবেন।

ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।

বুধবার, ৭ জানুয়ারী, ২০০৯

আমি নোয়াখালি থেকে বলছি...

নোয়াখালি বাংলাদেশের এক বৃহত্‌ জেলা। সেখানের ভাষা যেমন শক্ত, মানুষের মন তেমনি নরম। আমার বাবা নোয়াখালির মানুষ, এবং সেই সুত্রে আমিও। আমার বাড়িতে মহা বর্ণবিদ্দেষ। আমার মা বাংলাদেশের আরেকটি জেলা, সিলেটের মানুষ, যদিও মার জন্ম এবং বড় হওয়া ত্রিপুরার কৈলাশহরে। মা সিলেটি এবং বাবা নোয়াখালি; তাই আমার এক বন্ধু ছোটবেলা আমাকে বলতো আমি নাকি ‘নোয়াসিলেখালিটি’। হি হি হি। সে যাই হোক। আমি দুটো ভাষাই মোটামুটি জানি। আজকের এই গল্প দুটি নোয়াখালি নিয়ে। সিলেটি নিয়ে পরে মাতামাতি করা যাবে।

অনেক দিন আগে এটা পড়েছিলাম, খুব সম্ভবত আজকাল পত্রিকার রবিবাসরীয়তে। ঘটনাটা ঘটেছিল একজন লেখকের সাথে। উনার নামটাতো আজ আর মনে নেই। গল্পটা যতটুকু মনে আছে, বলছি। তিনি একবার গিয়ে পৌছলেন নোয়াখালির কোনো এক গ্রামে। দুপুর বেলা বাস থেকে নেমেছেন, খুব পরিস্রান্ত। নেমেই দেখলেন বাস স্ট্যান্ডের পাশে একটি ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে দাঁড়িয়ে। দেখে উনার বেশ লাগলো।

“তোমার নাম কি?” উনি এগিয়ে গিয়ে জিগেস করলেন।

“আঁর নাঁ নি? আঁর নাঁ হোঁতিয়াঁ।” বলেই মেয়েটি এক দৌড়ে হারিয়ে গেল।

লেখক হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন। কিছুতেই বোধগম্য হোল না যে মেয়েটি কি বললো। তার পর অনেকদিন তিনি ছিলেন ওই গ্রামে, কিন্তু ওই মেয়েটিকে কিছুতেই আর খুঁজে পেলেন না। কাউকে যে জিগেস করবেন, সেই ক্ষমতাও তো নেই; যা উচ্চারণ সেই মেয়েটি করেছিল, তিনি তা পারবেন কেন? অবশ্য নোয়াখালি ছাড়ার কিছুদিন আগে তিনি নিজের সেই প্রশ্নের জবাব পেয়েছিলেন। তিনি জানতে পেরেছিলেন যে সেই ছোট্ট মেয়েটি সেদিন তার প্রশ্নের জবাবে কি বলেছিল। সেটা অনেকটা এইরকম –

“আমার নাম নাকি? আমার নাম প্রতীমা।”

হা হা হা। ভাল না? হ্যাঁ। আমাদের ভাষাটাই এমন। তোমরা না বুঝলে আমাদের কি করার আছে? এসো, আমাদের সাথে থাকো, শিদল পোড়া আর পান্তা ভাত খাও কিছুদিন আর আমাদের মত পরিস্রম করো, তাহলে বছর খানেকের মধ্যে অবশ্যই শিখে ফেলতে পারবে।

যাই হোক। এবার একখানা গল্প বলি। এই গল্পটি আমি আমার বাবার মুখে শুনেছি এবং কম করেও শ’খানেক যায়গায় শুনিয়ে বাহবা কুড়িয়েছি। খুব সুন্দর একটি ছোট্ট উপাক্ষান। বলি, শোনো।

বাংলাদেশের ছোট ছোট গ্রামগুলো সব সুন্দর সুন্দর। গ্রামে গঞ্জে সব্বাই সবাইকে চেনে। গ্রামে সবই আছে – কবিরাজ, মন্দির, মসজিদ, ইস্কুল, হাট, পোস্ট অফিশ আরো কি কি। তবে সব কিছুই খানিক দূরে দূরে। যে সময়ের এই গল্প, সেই সময়ে না ছিল রিক্সা, না ছিল বাস, না ছিল ট্রাম। ছোট বড় সব মানুষই রাস্তা পায়ে হেঁটেই পার হতো। এমনই এক গ্রামে সেদিন ছিল ফল বের হবার দিন – মানে পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে ইস্কুলে। তাই সকাল থেকেই সব বাড়ি ঘরেই পূজা একটু বেশিই হলো। নামাজটাও সেদিন একটু বেশিক্ষনই চললো। ছেলেমেয়ের ফল বেরোবে, সেকি চাট্টিখানি কথা নাকি? হুম...

একটি ছোট্ট ছেলে তার ফল নিয়ে যেই না ক্লাসঘর থেকে বের হয়েছে, অমনি পাশের ক্লাসের রহিম স্যারের সাথে দেখা। অমনি প্রশ্ন এলো, “কিয়ারে, হাঁশ কৈচ্চতনি?” (কি রে পাশ করেছিস নাকি?) রহিম স্যারকে উত্তর দিয়েই সে ছুটে বেড়িয়ে এল, যেন আব্দুল মাস্টার বা নিমাই স্যারের প্রশ্নের সম্মুখিন হতে না হয়। কিন্তু তাতে কি আর রেহাই আছে? আগেই বলা হয়েছে যে গ্রামে সবাই সবাই কে চেনে। নাম না জানলেও এটা কার ছেলে বা কার মেয়ে তা যে কেউ বলে দিতে পারে। তাই যার সাথে দেখা, সেই একবার করে জিগেস করে, “কিয়ারে, হাঁশ কৈচ্চতনি?” ইস্কুল থেকে বাড়ি প্রায় দুই ক্রোশ পথ। পথে যার সাথেই দেখা, তার মুখেই সে এক প্রশ্ন। সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে অতিষ্ঠপ্রাণপ্রায় হয়ে সেই ছোট্ট ছেলেটি বাড়ি পৌছয়। বাড়িতে ঢুকতেই বাবার সাথে দেখা হলো। বাবা ছেলেকে কাছে পেয়ে খুশিতে কাছে ডেকে আনেন। আদর করে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক আশার সাথে জিগেস করলেন, “কিয়ারে, হাঁশ কৈচ্চতনি?”

আর পায় কে? ছোট্ট ছেলেটির মাথা গরম হয়ে যায়, এবং তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে এই কথাগুলো –

“হাঁশ কৈচ্চতনি, হাঁশ কৈচ্চতনি। হেতারগো বাড়ির মন্টু হাঁশ কৈচ্চে নি? হেতারা আঁরে হাল্লে টানি ধরি লামাই দেয়, আঁই কোনোমতে রইগেসিগৈ।”

কি, বুঝলে সে কি বলেছিল?

হেহেহে। এই ছিল সেই ছেলের জবাব, শুদ্ধ বাংলা ভাষায় –

“পাশ করেছিস নাকি, পাশ করেছিস নাকি। ওদের বাড়ির মন্টু পাশ করেছে নাকি? ওরা আমাকে পারলে টেনে ধরে নামিয়ে দেয়, আমি কোনোভাবে রয়ে গেছি।”
মানে ওর পরিক্ষার ফল এমন হয়েছে যে মাস্টারমশায়রা ওকে নিচের ক্লাসে পাঠিয়ে দিতে চাইছিলেন। ও জোর করে নিজের ক্লাসেই রয়ে গেছে। মন্টুও তো পাশ করেনি। তাহলে?

মঙ্গলবার, ৬ জানুয়ারী, ২০০৯

আলো, আর মন্দ নয়

ছবিতে ক্লিক করে বড় করুন।

শনিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০০৯

কৌতুক গল্প

ছোটবেলা মা বাবা এবং বন্ধু বান্ধবের মুখে অনেক সুন্দর সুন্দর কৌতুক শুনেছি এবং প্রাণ খুলে হেসেছি। এই ব্লগে লেখা এটা প্রথম কৌতুক। অনেক পুরোনো বলে সবচাইতে আগে ছাপাচ্ছি। আশা করি ভাল লাগবে।


আমি হাঁটতে বেড়িয়েছি। রাস্তাঘাটে বেরোলে আমরা প্রায়ই দেখে থাকি বিভিন্ন দেয়ালে বিভিন্ন লেখা লেখা রয়েছে। কেউ উনার বাড়ির কুকুর হইতে সাবধান করতে পোস্টার লাগিয়েছেন, আবার কেউ উনার দেয়ালে যেন পোস্টার লাগানো না হয়, তার জন্যে নিজেই এক পোস্টার সেঁটে দিয়েছেন। এমনই এক দেয়ালের গায়ে লেখা ছিল এই কথাগুলোঃ


আমরা প্রায়ই দেখে থাকি যে অনেকেই প্রাকৃতীক টান সহ্য করতে না পেরে যেখানে সেখানে যেমন গাছের নিচে, গাড়ির পাশে, নর্দমাতে বা দেয়ালের গোড়ায় বসে পড়েন বা দাঁড়িয়ে যান। এই অপরিহার্য অবস্থার কথা ভেবেই হয়তো এই দেয়ালটুকুর গায়ে লেখাটা লেখা হয়েছিল। তাতে কিছু লাভ হয়েছে কিনা বলা মুষ্কিল, তবে কিছুদিন পরে দেখা গেল যে যা না করার জন্যে এতবড় পোস্টার লাগানো, সেই কাজ আরো বেড়েই গেল এবং দেয়ালের পাশ দিয়ে যাতায়াত করাই হয়ে উঠলো দূরহ। তাই লেখক ঠিক করলেন যে নিজেই তদন্তে নামবেন।

তিনি যখন দেয়ালের পাশে এসে দাড়ালেন কি চলছে তা দেখতে, অমনি উনার চক্ষু চড়কগাছ! একি, লেখাটা তো পুরোপুরিই পাল্টে গেছে! কোনো মহাপূরুষ তার লেখার উপরে নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় রেখে গেছে এবং উনার লেখাটা এখন পাল্টে দাড়িয়েছে এইঃ



এরপর ওখানে কি হলো আর কেউ জানে না; আর জানলেও কখনো কথাটা দুকান করেনি। তাই আমিও আর আপনাদের জানাতে পারবো না। চলুন এগিয়ে চলি।

কিছুদুর চলার পর, পাওয়া গেল একখানা কবরস্থান। ওই যেখানে মৃত্যুর পর মানুষের ঘর করে রেখে দেওয়া হয়, সেই যায়গা। সাধারণত আমি বিশেষ সময় কাটাই না স্মশানভূমি বা কবরস্থানে। তাই দ্রুত পায়ে চল্লাম। এই লেখাটি দেখা গেল, মূল দড়জার পাশের দেয়ালে। দাড়াতেই হল!



আমার প্রশ্নঃ যদি বহিরাগতদের জন্যে বাহন রাখার ব্যাবস্থা না করা হয়ে থাকে, তবে কি এখানকার বসবাসকারিদের বাহনের জন্যে করা হয়েছে? আমি ঠিক জানি না, তবে যদি এনারাই রাত্তির বেলা নিজেদের বাহন সম্বল করে ভ্রমনে বের হন, তবে আর এখানে থাকার বিশেষ প্রয়োজন বোধ করছিনা। এবার আপনারাও কেটে পরুন। পরে আবার দেখা হবে, রাস্তার পাশে, বা সবুজ ঘাসে কোথাও।

কি আনন্দ!

বৃহস্পতিবার, ১ জানুয়ারী, ২০০৯

বৈঠা হারানো আমার ভাঙা নৌকা।

ছবিতে ক্লিক করে বড় করুন।

শুভকামনা

ছবিতে ক্লিক করে বড় করুন।

ভূমিকা

ওম নমঃ ভগবতে বাসুদেবায়


সুকান্ত ভট্টাচার্যের এই দুটি লাইন মনে পড়ে গেল।সম্ভবত উনার লেখা প্রথম কটা লাইন। আমার লেখা এটাই প্রথম বাংলা ব্লগ। আমি বলে বোঝাতে পারবো না আমার কত ভাল লাগছে বাংলায় লিখতে পেরে। যাই হোক। শেষ পর্যন্ত ব্লগটা তৈরি করা গেল। কিছুটা খাটতে হয়েছে – কিন্তু অন্যান্য কয়েকজন ভিনদেশীয় ব্লগার বন্ধুদের এবং আমার স্ত্রী, মৈত্রীর দৌলতে এখন এই ব্লগটা মোটামুটি তৈরি। আজ ২০০৯-এর প্রথম সকালে এই ব্লগটার উন্মোচন করতে পেরে আমার খুব ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে আমি নতুন করে বাংলা লেখা শিখছি। আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই অভ্র কিবোর্ডের জন্মদাতাদের। হয়তো এই সফটওয়ার না থাকলে আমি কখনই বাংলায় ব্লগ লেখার সাহস করতাম না। ধন্যবাদ আপনাদের। প্রায় পনেরদিন আগে আমি অভ্র কিবোর্ডের সাথে পরিচিত হই। তখনই ঠিক করে নিই যে আমি বাংলায় ব্লগ লিখবই। এই কদিন ব্লগের জন্যে সঠিক টেমপ্লেট খুঁজতে, ব্লগের নাম ঠিক করতে,ওপরের ছবিটা বানাতে এবং ব্লগের টেমপ্লেটটা এডিট করতে লেগেছে। এখনও কিছু কাজ বাকি আছে, তবে বেশিরভাগ কাজই শেষ। তাই আজ এই ব্লগটা পাবলিশ করা হচ্ছে। ধিরে ধিরে আরো লেখা হবে – আরো লেখা পোস্ট করা হবে। আপনাদের ভাল লাগলে খুশি হব।

একটা কথা যেটা না বললে এই ভূমিকা শেষ করা যাবে না, তা হল আমার এই ব্লগের সাথে জড়িত আমার এক চিত্রকার বন্ধু। পলাশ, যে তার নামের মতই সুন্দর সুন্দর সব ছবি আঁকে, আমার এই ব্লগের জন্যেও ছবি আঁকবে। আর এই ব্লগের সবচাইতে ওপরের ছবিটাও পলাশেরই আঁকা। আশা করি আমাদের বন্ধুত্ব সবসময় থাকবে।

আমি বাংলায় বরাবরই কাঁচা। বিশেষ করে বাংলা বানানে। তাই এই ব্লগের একজন সম্পাদক বা এডিটর চাই। যে কাউকে কি এতবড় একটা পদে বসানো যায়? না! একজন বিজ্ঞ ব্যাক্তি ছাড়া কাকেই বা বসাবো? অনেক ভাবনা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত মৈত্রীকেই এই পদে নিযুক্ত করা হল। ও প্রত্যেকটা পোস্ট পাব্লিশ করার আগে এডিট করবে এবং ওর অনুমতির পরই একটা লেখা ছাপানো হবে। একা একা আমি কোনকাজই করতে পারিনা। তাই আমার অর্ধাঙ্গিনিই আমার সাথ দেবে এবং গড়ে তুলবে আমাদের এই হযবরল।

আপনাদের ভাল লাগলে খুশি হব। মন্তব্য করতে ভুলবেন না যেন...

বাংলা ভাষা

বাংলা শুনলেই আমার জ্বর আসতো। এখোনো একটা ভয় রয়েই গেছে। তবুও এই বাংলা ভাষাই আমার প্রিয়। কত কবিতা, কত গান, কত গল্প লিখেছি আমি বাংলায়। সেই পুরাতন দিন, যখন পাতার পর পাতা চিঠি লিখতাম আমার প্রিয়তমাকে, কবিতা লিখে পাঠাতাম বাংলায়। এবার আবার সুযোগ পেয়েছি বাংলায় লেখার। এ সুযোগ আমি ছাড়ব না।

আমার বাড়ি

আমার বাড়ি আগরতলায়, ত্রিপুরার রাজধানী। ভারতবর্ষের উত্তর পূর্ব প্রান্তের ছোট্ট রাজ্য, ত্রিপুরা। জাতি উপজাতি মিলে মিশে থাকি আমরা। আমার বাড়ি ওখানে। ছোট্ট আমাদের শহর, আগরতলা। খুব সুন্দর জায়গা। আমার সবচাইতে প্রিয় শহর। তোমরা এসো - দেখে যেয়ো আমার বাড়ি।

ব্লগ সম্বন্ধীয়

এটা আমার প্রথম বাংলা ব্লগ। ব্লগ তো আমি অনেক লিখি, তবে বাংলায় এই প্রথম প্রচেস্টা। খুব ইচ্ছে ছিল বাংলায় লেখার। অনেক সফট্যার ঘাটা ঘাটি করে পেলাম এই উৎকৃসষ্ট অভ্র কিবোর্ড। এবার আমিও লিখব – বাংলা ভাষায়। মন খুলে, প্রাণ খুলে লিখব। আশা করি তোমরা পড়বে এবং উৎসাহ দেবে। ধন্যবাদ।

আমার কথা

আমার নাম তন্ময়।
আমি ভালবাসি লিখতে – কবিতা, গান, গল্প।
আর ভালবাসি নতুন নতুন মানুষের সাথে বন্ধুত্য করতে।
জীবনকে ভালবাসি, এবং হাসিমুখে অভিনন্দন জানাই জীবনের প্রতিটি মোড়কে।
সব কাজ ভিন্ন ভাবে করতে চাই – কিন্তু বিভিন্ন কাজ করেই দিন যাপন করি।
ব্লগ লেখা শুরু ক’বছর আগে, তবে বাংলা ব্লগ এই প্রথম। আমার ভালো লাগে ব্লগ লিখতে। এখানে আমি একা হলেও, আমি প্রাণ খুলে লিখতে পারি। মনের কথা গোপন রাখার কোনো দরকার হয় না। নিজেকে উজাড় করে লিখতে পারি। এটা ছাড়াও আমার আর কয়েকটা ব্লগ আছে, যাদের লিঙ্ক দেওয়া আছে এখানে।
আমার লেখা পড়ে, যদি তোমার ভালো লাগে, তো খুশি হবো। মন্তব্য করতে ভুলো না যেন!

এই যে। কই চল্লেন? এদিকে আসুন।

আমার দুটো কথাঃ

ভালবাসলে যখন তুমি আমাকে, তবে কেন বলো দূরে সরে থাক
আজকের এই জোছনা ভরা রাত, আর জীবনে ফিরে আসবে নাকো।

  © Blogger template 'Personal Blog' by Ourblogtemplates.com 2008

একদম ওপরে চলুন।